আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

সুপ্রিয় দর্শক মন্ডলী আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন।    

প্রিয় দর্শক ,,

জান্নাত হবে অসীম ঐশ্বর্য ও অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর অনাবিল এক জগত। মানুষ ও জিন জাতি পার্থিব জীবনের পুণ্যকর্মের পুরষ্কার হিসেবে প্রবেশ করবে পরম সুখ-শান্তি এবং ভোগ-বিলাসের অকল্পনীয় জগত জান্নাতে। প্রত্যাশিত নয়নাভিরাম জান্নাতে সর্বপ্রথম কে ও কারা প্রবেশ করবেন- এ কৌতূহল সব মুমিনের। অপার্থিব সে অবস্থার কিছু বর্ণনা নিম্নে করা হলো।


জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী : হাশরের মাঠ থেকে পুরসিরাতের ভয়ংকর পুল পার হয়ে জান্নাতের প্রবেশদ্বারে সর্বপ্রথম প্রিয়নবী (সা.) উপস্থিত হবেন এবং তিনিই জান্নাতের কড়ায় টোকা দিবেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় দিয়ে দরজা খোলার অনুমতি চাইলে জান্নাতের রক্ষক বলবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মদ! তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আপনার ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন আপনার আগে কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৮)


উম্মতের মধ্যে প্রথম প্রবেশকারী : প্রিয়নবীর মাধ্যমে জান্নাতের প্রধান ফটক খোলার পর সর্বপ্রথম উম্মতে মুহাম্মদি প্রবেশ করবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমরা সর্বশেষ উম্মত, কিন্তু কেয়ামতের দিন জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে থাকবো সবার অগ্রবর্তী দলে। যদিও তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে এবং আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৫)। উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করবেন আবু বকর (রা.)। তার পর আমল ও মর্যাদার পরিমাণ অনুযায়ী অন্যান্যরা প্রবেশ করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিবরাইল এসে আমার হাত ধরে জান্নাতের দরজা দেখালেন, যে দরজা দিয়ে আমার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ তখন আবু বকর (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমিও আপনার সঙ্গে থাকব, যেন জান্নাতের দরজা দেখতে পারি।’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আবু বকর, শুনে রাখো, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫২)


সর্বপ্রথম প্রবেশকারী দল : সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে দুনিয়ায় তাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসুল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি জানো, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে কারা প্রবেশ করবে?’ তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে দরিদ্র মুহাজিররা। যাদের মাধ্যমে সীমান্তের প্রহরা নিশ্চিত করা হয়। তাদের মাধ্যমে যেকোনো বিপদ-আপদ দূর করা হয়। এমনভাবে তাদের মৃত্যু হয় যে আশা-আকাঙ্খাগুলো তাদের অন্তরের ভেতরেই রয়ে যায়। তারা তা পূরণ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, তাদের কাছে যাও, তাদের সালাম প্রদান করো। ফেরেশতারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা তো আপনার আসমানের বাসিন্দা, আপনার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবন। আপনি আমাদের বলছেন, তাদের কাছে গিয়ে সালাম প্রদান করি?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তারা আমার বান্দা, আমার ইবাদত করেছে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করেনি। তাদের এমন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে যে তাদের প্রয়োজনের কথা তার মনে রয়ে গেছে। তা আর পূরণের সামর্থ্য হয়নি।’ অতঃপর ফেরেশতারা তাদের কাছে যাবে। সব দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদের সালাম জানাবে। বলবে, ‘ধৈর্য ধারণের ফল হিসেবে তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের শেষ নিবাস কতই না উত্তম!’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭০)

প্রিয় দর্শক ,,

সুতরাং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাজিলকৃত বিধান এবং তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরুন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হিদায়াত দান করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।