Header Ads Widget

Responsive Advertisement

হযরত ইব্রাহিম আঃ কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের অলৌকিক গল্প

 আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় ভালো আছেন,

প্রিয় দর্শক ,,






কুরআনুল কারিমের মানুষের জন্য সর্বোত্তম নিষ্কলুষ ও নির্ভূল জীবন ব্যবস্থা। যে বা যারা কুরআনের আলোকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছে; তাদের দুনিয়া ও পরকালীন জিন্দেগি সফলতায় পরিপূর্ণ।


এ কুরআনে আল্লাহ তাআলা জীবন ব্যবস্থার উত্তম নীতিমালার পাশাপাশি মানুষের জন্য রেখেছেন আগের অনেক নবি-রাসুলদের জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা। যা মানুষের তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে সহায়ক। মানুষের জন্য ইতিহাস, উপদেশ ও জীবন সমস্যার সমাধান।



ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ। নূহ থেকে ইবরাহীম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। হযরত ছালেহ (আঃ)-এর প্রায় ২০০ বছর পরে ইবরাহীমের আগমন ঘটে। ঈসা থেকে ব্যবধান ছিল ১৭০০ বছর অথবা প্রায় ২০০০ বছরের। তিনি ছিলেন ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা এবং তাঁর স্ত্রী ‘সারা’ ছিলেন ‘উম্মুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের মাতা। তাঁর স্ত্রী সারার পুত্র হযরত ইসহাক্ব-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর ‘বনু ইসরাঈল’ নামে পরিচিত এবং অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে জন্ম নেন বিশ্বনবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। যাঁর অনুসারীগণ ‘উম্মতে মুহাম্মাদী’ বা ‘মুসলিম উম্মাহ’ বলে পরিচিত।


বাবেল হ’তে তিনি কেন‘আনে (ফিলিস্তীন) হিজরত করেন। সেখান থেকে বিবি সারা-র বংশজাত নবীগণের মাধ্যমে আশপাশে সর্বত্র তাওহীদের দাওয়াত বিস্তার লাভ করে। অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র ইসমাঈলের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ ও তার আশপাশ এলাকায় তাওহীদের প্রচার ও প্রসার হয় এবং অবশেষে এখানেই সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে। এভাবে ইবরাহীমের দুই স্ত্রীর বংশজাত নবীগণ বিশ্বকে তাওহীদের আলোয় আলোকিত করেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দেহসৌষ্ঠব ও চেহারা মুবারক পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর ন্যায় ছিল। যা তিনি মে‘রাজ থেকে ফিরে এসে উম্মতকে খবর দেন।


মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও অত্যাচারী শাসক নমরুদের সঙ্গে আলোচিত কথাও ওঠে এসেছে পবিত্র কুরআনে। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এক দাবির কাছে হতবুদ্ধি হয়ে যায় বাদশাহ নমরুদ।


থিত আছে যে, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর পিতা নমরুদের দরবারের কর্মকর্তা ছিল। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন প্রকাশ্য শিরকের বিরোধীতা ও তাওহিদের প্রচার শুরু করে এবং তাদের দেবালয়ে প্রবেশ করে দেব-দেবীর মূর্তিসমূহকে ভেঙ্গে ফেলেন তখন তাঁর পিতা নিজেই বাদশাহর কাছে ছেলের বিরুদ্ধে নালিশ করে।


বাদশাহ নমরুদ একত্ববাদের আহ্বানকারী হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সে কেমন প্রভু? যার প্রতি তুমি মানুষকে আহ্বান করছ? আমাকে তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য শোনাও।



তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বললেন, ‘জীবন-মরণের সব শক্তি তারই হাতে। তিনি সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকর্তা ও পালনকর্তা। কারো সাধ্য নেই যে তাঁর এ ক্ষমতার মধ্যে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এ প্রশ্নের উত্তরেই নির্ধারিত হয়েছিল যে, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী শুধুই আল্লাহ তাআলা।


নবী ইব্রাহীম (আ.) যখন শিশু, তখন সবাইকে দেখতেন মূর্তি পূজা করতে। এ ব্যাপারে তাঁর প্রচন্ড আপত্তি ছিল। ইব্রাহীম (আ.) বলতেন – মানুষ কেন মাটির গড়া মূর্তির পূজা করবে? একমাত্র আল্লাহর সামনেই তাকে মাথা নত করতে হবে। তার এই বিপ্লবী চেতনা বাদশাহ নমরুদের কানে যেতে সময় লাগেনি।


একটু বড় হবার পরে একদিন ইব্রাহীম (আ.) নমরুদের পূজাখানার মূর্তিগুলো ভেঙ্গে কুড়ালটি সবচেয়ে বড় মূর্তিটির কাঁধে ঝুলিয়ে রাখলেন। ইব্রাহীম (আ.) কে রাজ দরবারে ধরে নিয়ে আসা হলো। নমরুদ তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি কি মূর্তিগুলো ভেঙ্গেছেন কিনা?


ইব্রাহীম (আ.) বললেন, যে মূর্তিটার কাঁধে কুড়াল ঝুলানো আছে তার কাছে জিজ্ঞেস করো, কে মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গেছে?


মূর্তি কি কথা বলতে পারে? রাগত স্বরে বললো নমরুদ।


ইব্রাহিম (আ.) তখন বললেন, যে দেবতা কথা বলতে পারে না, নিজেকে রক্ষা করতে পারেনা, সে তোমাদের প্রভু হয় কিভাবে?


এ কথায় নমরুদ রাগে উত্তেজিত হয়ে ঠিক করল ইব্রাহীম (আ.) আগুনে পুড়িয়ে মারার। তৈরি হলো অগ্নিকুন্ড। সেই অগ্নিকুণ্ডের চারিদিকে জড়ো হলো উৎসুক জনতা। সবার চোখেই নিশ্চিত আতঙ্ক।


এ সময়ে জিব্রাইল ফিরিস্তা এসে ইব্রাহীম (আ.)কে বলতে লাগলো- আগুন থেকে আপনাকে বাঁচাতে আমি সাহায্য করতে এসেছি।


ইব্রাহীম (আ.) তার জবাবে বললেন ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। যে আল্লাহর একত্ববাদের তালাশের জন্য আজ আমাকে আগুনে ফেলা হচ্ছে, সেই আল্লাহই সবকিছু দেখছেন। আল্লাহ চাইলে তিনিই আমাকে রক্ষা করতে পারেন। আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে মেরে ফেললে আল্লাহ যদি রাজি থাকেন তাতেই আমি রাজি।’


নমরুদের নির্দেশে যথাসময়ে ইব্রাহীম (আ.)কে আগুনের মাঝখানে ফেলে দেয়া হলো। কিন্তু একী! সবাই তাকিয়ে দেখছে ইব্রাহীম (আ.) তো পুড়ছে না! যে আগুন সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়, তিনি সেই লেলিহান শিখার ভেতরে বসে হাসছেন তিনি।


এটাই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। ইব্রাহীম (আ.)’র এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ দেখালেন তার মহাশক্তির একটুখানি ঝলক ।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের যাবতীয় বিধি-বিধানের পাশাপাশি আগের সব নবি-রাসুলদের সঙ্গে সমকালীন বাদশাহদের কথা-বার্তাসহ যাবতীয় ঘটনা জানার তাওফিক দান করুন। ঈমানি চেতনা বৃদ্ধিতে ঐ সব ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।


Post a Comment

0 Comments