আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সুপ্রিয় দর্শক মন্ডলী,,
আশা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানি ও দয়ায় এই মাহে রমজানে আপনারা সবাই ভাল আছেন।
প্রিয় দর্শক,,
হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক অষুখ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
তবে শুরুতেই যদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায সঠিকভাবে তৈরি করা যায়, তবে উচ্চরক্তচাপ একদম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
আজ ৮ টি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রতিদিন অবশ্যই আপনাকে খেতে হবে। এবং এমন ৮ টি খাবারের নাম বলব, যা কখনোই খাবেন না। কিন্তু আমরা বেশি খাচ্ছি। প্রথমে বলছি কফি,,
কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য কফি খাওয়া একদম নিষেধ।
কারণ,, ক্যাফিন রক্তনালীকে সরু করে দেয়,, ফলে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার রক্ত চাপের ফলে, স্ট্রোক হতে পারে। তাই উচ্চরক্তচাপ থাকলে কফি বা অতিরিক্ত চা পানের অভ্যেস একেবারে বাদ দিবেন। তার বদলে প্রতিদিন 1 থেকে 2 কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন।
দুই নম্বর হচ্ছে লবণ,,
উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হলো,, শরীরের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। আর ঐসোডিয়াম, লবণ থেকে আসে।
বিশেষত আমরা যে আয়োডিনযুক্ত পরিশোধিত সাদা লবণ খাচ্ছি, এটাতেও সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই খুব সীমিত পরিমাণে
লবণ খেতে হবে।
তিন নাম্বার হচ্ছে লাল মাংস,,
উচ্চরক্তচাপে লাল মাংস, অর্থাৎ গরু খাসি ও মহিষের মাংস একেবারে বাদ দিতে হবে।
অথবা আপনি 10 দিন বা 15 দিন পর একবার খেতে পারেন। তাও 70 গ্রাম থেকে 100 গ্রাম এর বেশি নয়। কারণ এই লাল মাংস মাত্রাতিরিক্ত খেলে, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। যা হৃদরোগ বা স্ট্রকের কারণ হয়।
চার নম্বর হচ্ছে চিনিযুক্ত খাবার,,
উচ্চ রক্তচাপে চিনি বা চিনিযুক্ত যেকোনো খাবার একদম বর্জন করতে হবে। কেক, পেস্ট্রি থেকে শুরু করে বাজারের জুস,, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো মেদ বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়াতে থাকে। এভাবে হৃদরোগের ঝুকি ও উচ্চরক্তচাপ বাড়ে।
পাচ নম্বর হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং মুরগির চামড়া,, বিশেষ করে ফার্মের মুরগির চামড়া,,
ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তা হল যে,, আপনি প্রতিদিন একটা ডিমের কুসুম খেলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সে জায়গায় যদি তিন থেকে চারটা ডিমের কুসুম খাওয়া হয়ে যায়,, তাহলে ক্ষতি আছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথম ডিমটার কুসুমসহ খাবেন,, বাকিগুলোর সাদা মাংস খাবেন। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে।
ছয় নম্বর হচ্ছে,, আচার এবং শস জাতীয় খাবার,,
যা আমরা খুব পছন্দ করি পুরি, সিঙ্গারা সাথে খাওয়া। কিন্তু এগুলো উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া যে কোন ফাস্টফুড খাবার, অ্যালকোহল, এগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।
এবার আসুন,,
আমরা চারটি খাবারের কথা জানবো, যেগুলো আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে।
এর মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে,,
জবা ফুলের চাঁ,,
কারণ,,জবা ফুলের চাঁয়ের সাথে এমন অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টিজ রয়েছে,, জানিমিষেই আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনে।
কারণ এই পানিয়টি ব্লাড ভেসেল এর কর্ম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি, শরীর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভূমিকা পালন করে। এবং হার্টের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একদমই থাকে না। যেহেতু চা আমাদের দৈনিক অভ্যেস, তাই একবার যদি আপনি জবা ফুলের চা খেতে পারেন, তাহলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
জবা ফুলের চা বানানোর জন্য, দুই কাপ পানি দিয়ে তিনটি জবা ফুলের শুধুমাত্র পাপড়িগুলো চিনি মিশিয়ে নিন। তারপর তিন থেকে চার মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর ফুটানো পানি পান করুন। যদি আপনার ডায়াবেটিস না থাকে,, তাহলে এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
এবার আসুন দ্বিতীয় খাবারটি, যেটা আমাদের ব্লাড প্রেসার টাকে ইনস্ট্যান্ট অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে
নিয়ন্ত্রণ করবে।
সেটা হচ্ছে, কম ফ্যাটযুক্ত টক দই।
অর্থাৎ ঘরোয়াভাবেই দুধ দিয়ে তৈরি টক দই। সেটা কিন্তু আপনার ব্লাড প্রেসার কে একদম নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে। যেটাতে চিনি নেই। কারণ এই টকদই, ব্যাকটেরিয়ার ল্যাব্সকে ভেঙ্গে নাইট্রিক এসিড তৈরি করে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে রক্তচাপ একদম নিয়ন্ত্রণে আসবে। দুপুরে খাবারের পর 100 গ্রাম টক দই নিয়মিত খাবেন। তবে এই টক দইয়ের সঙ্গে কোন প্রকার লবণ আর চিনি মিশিয়ে খাবেন না। তাহলে উপকার থেকে অপকারই বেশি হবে।
তিন নম্বর হচ্ছে মেথির পানি,,
মেথির পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এ জন্য প্রতিদিন রাতে এক কাপ বিশুদ্ধ পানিতে 1 চা চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ 1 লিটার পানি পান করার পর এই মেথি চিবিয়ে খান। এবং সাথে মেথি ভেজানো পানি পান করে নিন। যদি প্রতিদিন আপনারা এই মেথি খাওয়ার নিয়ম মানতে পারেন। তাহলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি আপনার অন্যান্য অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
চার নম্বর হচ্ছে,, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার।
সব ধরনের ভিনেগার এর মধ্যে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সবচেয়ে উপকারী। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এই ভিনেগার শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও টক্সিন বের করে দেয়। এতে রেনিন এনজাইমের উপস্থিত থাকায় এটি রক্তচাপ হ্রাস করে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে একগ্লাস উষ্ণ পানিতে 2 চামচ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে রাতে খাবারের আধ ঘণ্টা আগে পান করুন। তবে খেয়াল রাখবেন, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কখনো ধাতব পাত্রে রাখবেন না। এবং অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কেনার আগে 5 পার্সেন্ট এসিডিটি দেখে নিন। এরপরে খেতে পারেন, কাঁচা রসুন, পাকা কলা, ডার্ক চকলেট, লেবুর পানি।
এই প্রত্যেকটা খাবারেই এমন উপাদান রয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার রক্তচাপকে একদম নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে।
তাহলে ইনশাল্লা যখন ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যাবে,
হয়ত লেবুর পানি খাবেন, অথবা পাকা কলা খাবেন। কাঁচা রসুন খাবেন। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অথবা মেথির পানি অথবা টক দই অথবা জবা ফুলের চা।
নাম গুলো মনে রাখবেন, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সবসময় আপনার কাজে আসবে ইনশাআল্লাহ।
0 Comments