Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ফাতেমা রাঃ এর বিয়ের দিন সকালে কি ঘটেছিল??

 আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

প্রিয় দর্শক 

হযরত ফাতেমা রাঃ এর বিয়ের দিন কি ঘটেছিলো জানলে সত্যিই অবাক হবেন 


 হযরত ফাতেমাতুজ আল্লাহ জোহরা ( রাঃ ) আনহা পবিত্র মদীনা শরীফ গমন করার পর থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসা শুরু হল । বহুদূর দুরান্তে হতে শিক্ষিত ধন্যবান ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুদর্শন যুবক হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) -এর আদরের কন্যা কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমাতুজ জোহরাকে ( রাঃ ) বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ করার জন্যে অধীর আগ্রহে প্রস্তাব পাঠাতে লাগলেন । এমনকি আনসার ও মুহাজিররা রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) এর জন্যে জীবন উৎসর্গ করে রাসূলুল্লাহর কন্যা ফাতেমা ( রাঃ ) কে পাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে । বিভিন্ন স্থান হতে প্রস্তাব আসলেও মহানবী কাউকে কোনরূপ কথা না দিয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন । কে দিতে পারবে আমার আদরের কন্যা নয়নের মণি কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমাতুজ জোহরার ইজ্জত ও সম্মান । রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) দিবা রাত্রি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও তার মনের মধ্যে একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে কার কাছে বিবাহ দিলে তার দীন ঈমান ও ইজ্জত আবরু রক্ষা পাবে । আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) ফাতেমা ( রাঃ ) কে মূলত এমন একজন সৎ , যোগ্য জ্ঞানী , বুদ্ধিমান , শিক্ষিত , আল্লাহভীরু ন্যায়পরায়ণ , বিচক্ষণ ও সম্ভ্রান্ত ছেলের কাছে অর্পণ করতে রাসূলাল্লাহ ( সাঃ ) -এর মনের একান্ত প্রত্যাশা । দূর - দূরান্ত হতে যত প্রস্তাব আসুক না কেন কোন পাত্র রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর চিন্তাও আশা অনুযায়ী হয় না । যার কারণে কাউকে কোন রূপ কথা না দিয়ে চুপ করে থাকেন । মূলত আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) তার কলিজার টুকরার জন্যে কোন ধন্যবান পাত্র চান না । তিনি চান প্রকৃত ঈমানদার , হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) এর শরীরের গঠন প্রকৃতি , সৌন্দর্য রূপস্তুণ ভদ্রতা , নম্রতা আচার ব্যবহার কথাবার্তা দানশীলতা , অতিথেয়তা , আমানতদারী , পিতা - মাতার আনুগত্যতা , ইবাদত গুজার , আল্লাহ ভীরুতা , তাকওয়া সুতীক্ষ্ম প্রজ্ঞা , চাল - চলন , কর্ম সম্পৃহা , শোয়া - বসা , খাওয়া - পরা , শিক্ষা - দিক্ষা , আদব- আখলাক , ধৈর্য , ধ্যান তপস্যা তাওয়াক্কুল ইত্যাদি রকমের মহৎ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রায় সকলের জানা ছিল । যার কারণে তাদের মধ্যে হতে অনেকেই হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) কে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পাওয়া জন্যে সরাসরি রাসূলূল্লাহ হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর প্রবিত্র দরবারে উপস্থিত হয়ে বুক ভরা আশা নিয়ে প্রস্তাব দিতেন । যোগ্যদের মধ্যে হতে সর্ব প্রথম হযরত আবু বকর ( রাঃ ) -এর পর হযরত উমর ফারুক ( রাঃ ) হযরত ফাতেমার ( রাঃ ) কে বিবাহ করার জন্যে আবেদন পেশ করলেন । তাদের বিশেষ আবেদন শুনা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) তাদের আবেদনের কোন জবাব দিলেন না । পরিশেষে সত্যের সৈনিক শেরে খোদা হযরত আলী ( রাঃ ) আবেদন করলেন হযরত আলী ( রাঃ ) আবেদন করার সাথে সাথে হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বললেন , বিবাহের মোহরানা আদায় করার মতো তোমার নিকট কি আছে ? তখন হযরত আলী ( রাঃ ) বলিলেন একটি ঘোড়া ও একটি বর্ম ছাড়া আর কিছু নেই । হযরত আলী ( রাঃ ) এর সাহসী মনের সাহসী কথা শুনে হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বললেন যুদ্ধের জন্যে অবশ্যই ঘোড়া দরকার বিধায় তুমি বর্মটি বিক্রি করতে পার । এরপর অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে হযরত আলী আদবের সাথে সেখান হতে বিদায় নিয়ে গেলেন । হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) যেমনি যোগ্য তার মনের মত পাত্র চেয়েছিলেন রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালা তাই মিলায়ে দিলেন ।

হযরত আলী ( রাঃ ) -এর সাথে শুভ বিবাহ


 হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর পবিত্র মুখের কথা ও নির্দেশ অনুযায়ী ইসলামের বীর সৈনিক হযরত আলী ( রাঃ ) হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) -এর শুভ বিবাহের মহোর আদায় করার জন্যে খুশি মনে আপন লৌহ বর্ম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং বর্মটি বিক্রি করার জন্যে গ্রাহকের সম্মান করতে লাগলেন । অনেক খোঁজাখুঁজি করেও উপযুক্ত গ্রাহক না পেয়ে বর্মটি নিয়ে পরের দিন হযরত আলী ( রাঃ ) হযরত রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) দরবারে উপস্থিত হলেন । ঐ মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর দরবারে হযরত আবুবক্কর সিদ্দিক ( রাঃ ) হযরত উমর ফারুক ( রাঃ ) হযরত উসমান যিন নুরাইন ( রাঃ ) সহ আর অনেক সাহাবা উপস্থিত ছিলেন । হযরত রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) নিজেই উপস্থিত সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন , তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছ যে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে আলী ( রাঃ ) -এর বর্মটি ক্রয় করতে পার । রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) কথা শুনা মাত্রই কালবিলম্ব না করে হযরত উসমান ( রাঃ ) -দাঁড়িয়ে বললেন , হে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) আমি ৪৮০ দিরহাম মূল্য দিয়ে বর্মটি ক্রয় করতে প্রত্যাশি । হযরত উসমান ( রাঃ ) -এর কথা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বর্মটা হযরত উসমান ( রাঃ ) -হাতে দিলেন  হযরত উসমান ( রাঃ ) মনের খুশীতে নগদ ৪৮০ দিরহাম দিয়ে বর্মটি কিনে নিলেন এবং এই অর্থ রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর সামনে রাখলেন । আল্লাহর রাসূলুল্লাহ টাকা নিয়ে হযরত আলী ( রাঃ ) -এর হাতে দিলেন । হযরত আলী ( রাঃ ) সেই টাকাগুলো দিয়ে বিবাহের যাবতীয় খরচ বহন করেন । এদিকে হযরত উসমান ( রাঃ ) আনন্দ মহূর্তে অত্যন্ত খুশী হয়ে হযরত আলী ( রাঃ ) কে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্যে লোহবর্মটি ফেরত দিলেন বর্মটি ফেরত দেওয়ায় হযরত আলী ( রাঃ ) আনন্দিত হলেন । রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) খুশী হয়ে হযরত উসমান ( রাঃ ) কে প্রাণ ভরে দোয়া করলেন । আর হযরত বেলাল ( রাঃ ) কে আতর ও খোশবু আনার জন্যে বাজারে পাঠালেন । কোন বর্ণনা হতে জানা যায় । রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) হযরত ওমর , সালমান ফারসী , সাদ ইবনে আবু ওক্কাস প্রমুখ সাহবাগণ ( রাঃ ) কে বাজারে পাঠিয়ে দু'টি বালিশ , একটি পরদা , এক খানা চাদর , দু'খানা বাসন দু'টি বাজু বদ্ধ , দু'টি পেয়ালা এবং একটা মাটির বাসন কিনে আনালেন । এদিকে হযরত আলী ( রাঃ ) প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে এনে উপস্থিত হলেন । এর পরে রাসূলুল্লাহ হযরত  ( সাঃ ) এর নির্দেশে হযরত আলী ( রাঃ ) কে মসজিদের সামনে উপস্থিত করা হল । এর পরে রাসূল ( রাঃ ) নিজেই মিম্বরে বিবাহের খোতবা পাঠ করলেন । খোতবা শেষ করেই রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) উপস্থিত মেহমান সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন তোমরা সকলেই জেনে রাখ এবং সাক্ষী থাক যে আমি চারশ দিরহাম মহরের বিনিময়ে আলী ইবনে আবু তালিবের সাথে আমার কন্যা হযরত ফাতেমাকে বিবাহ দিচ্ছি । এরপরে শেরে স্লোদ হযরত আলী ( রাঃ ) কে সম্বোধন করে বলেন আমি আমার কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরাকে চারশ দিরহাম মহরের বিনিময় তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম তুমি এতে সম্মতি আছ কি ? হযরত আলী ( রাঃ ) আদবের সঙ্গে উত্তর করলেন আল্লহামদুলিল্লাহ । আমি কবুল করলাম । এর পরে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) উপস্থিত মেহমানদেরকে নিয়ে রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেগ জড়ান কণ্ঠে প্রার্থনা করলেন এবং দম্পতির সুখী হওয়ার জন্যে দোয়া করলেন । দোয়ার শেষে উপস্থিত মেহমানদের মধ্যে খেজুর বিতরণ করলেন । রাসূলুল্লাহজির নয়নের মনি হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) শুভ বিবাহের সময় হযরত খাদীজাতুল কোবরা ( রাঃ ) ছাড়া রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর যে সমস্ত স্ত্রী ছিলেন তারা সকলেই এই বিবাহের আসবাবপত্র সহ সকল ব্যবস্থা করেন । বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর বিশেষ নির্দেশে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বিবাহের আনুষঙ্গিক কাজে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করেন । তিনি ঘর দুয়ার লেপেদেন এবং বিছানা ঠিকঠাক করে দেন , এফাকি নিজ হাতে খেজুবের বাকল ধুনে বালিশ বানিয়ে দেন মেহমানদের সামনে । উন্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) , হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) -এর বিবাহ সম্পর্কে বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন , আমি ফাতেমা ( রাঃ ) -এর বিবাহের মত এমন সুন্দর ও উত্তম বিবাহ অনুষ্ঠান আর কোথাও দেখিনি । স্বামীর ঘরে হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) -এর কর্ম ব্যস্ততা 

হযরত আলী ( রাঃ ) -এর সঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর কন্যা হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) শুভ বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) প্রিয় জামাতা হযরত আলী ( রাঃ ) কে আপন হুজরায় নিয়ে গেলেন । হযরত আলী ( রাঃ ) ও ফাতেমা আলী ( রাঃ ) কে একত্রে নিজের কাছে বসালেন এবং প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে এবং উপদেশ দিয়ে জামাতাকে উত্তমভাবে মেহমানদারী করালেন । এরপরে নিজের অযুর পানি জামাতা আলী ও ফাতেমার শরীরে ছিটিয়ে দিলেন । তারপর প্রিয় জামাতা হযরত আলী ( রাঃ ) কে নিজের ঘরে হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) এর সঙ্গে একত্রে রাত্রি যাপন করতে দিলেন । আল্লামা সোলায়মান নদভী ( র ) সাহাবা চরিত্রে বর্ণনা করেন যে বিবাহের পূর্বে হযরত আলী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর সঙ্গে অবস্থান করতেন এবং রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) -এর ঘরে অবস্থান করেন । কোন কোন বর্ণনা হতে জানা যায় বিবাহের পরে হযরত আলী ( রাঃ ) প্রায় দশ এগারমাস রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) এর সঙ্গে অতিবাহিত করেন । হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) পিত্রালয়ে থাকাকালীন সাধ্যানুযায়ী স্বামীর খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন । মেয়ে ও জামাতার মধ্যে যেন মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সে দিকে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বিশেষভাবে খেয়াল রাখতেন । বিবাহের পর হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) পিতার বাড়িতে প্রায় এগারটি মাস অতিবাহিত করেন । হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) -এর বিবাহের সময় ও বয়স অধিকাংশ সীরাত বর্ণনা কারীদের মতে হযরত রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) দ্বিতীয় হিজরী সনে হযরত আলী ( রাঃ ) -এর সঙ্গে হযরত ফাতেমা ( রাঃ ) -এর শুভ বিবহারে কার্য সুসম্পন্ন হয় । তাদের এই পবিত্র বিবাহ মসজিদে নব্বীতে হয়েছিল । তরকাতে ইবনে সাদ ও খোলাফায়ে রাশেদীনে উল্লিখিত আছে যে শুভ বিবাহের সময় রাসূলুল্লাহ কন্যা হযরত ফতেমাতুজ জহরার ( রাঃ ) বয়স হয়েছিল কেবলমাত্র ১৪ বছর । অন্যদিকে শেরে খোদ ! হযরত আলী ( রাঃ ) বয়স হয়েছিল মাত্র ২৩ বছর । আল্লামা শিবলি নোমান ও সৈয়দ সোলায়মান নদভী ( র ) সীরাতুননবী কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ডে উল্লেখ করেছেন যে হযরত আলী ( রাঃ ) যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স হয়েছিলমাত্র একুশ বছর পাঁচমাস মতান্তরে চব্বিশ বছর । এর মধ্যে প্রথম মতটিই সর্বাধিক সহীহ ও গ্রহণযোগ্য । দ্বিতীয় হিজরী সনের ব্যাপারে কারো কোন মন্তব্য নেই।

Post a Comment

0 Comments