Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রাসুল সঃ কেন নিজের পুত্রবধুকে বিয়ে করেছিলেন রাসূল সাঃ ও জয়নব রাঃ এর ঐতিহাসিক বিয়ে

আল্লাহর রাসূল (সঃ) নবুয়তের পরে যা কিছু করেছেন তার সবটাই ছিল আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে। রাসূল (সঃ) এর কোন কাজকে অস্বীকার করা বা প্রশ্নের সম্মুখিন করা সরাসরি আল্লাহর হুকুমকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল।





জাহেলীয়াতের সকল রসম রেওয়াজকে ভেঙ্গে একটা ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করার জন্যই আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (সঃ) কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন। সমাজের সকল ভ্রুকুটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাসূল (সঃ) আল্লাহর সকল বিধানকে বাস্তব জীবনে আমল করে দেখিয়েছেন। 

৫ম হিজরীর যিলক্বাদ মাসে নবী করীম (সা:) আরব থেকে পালক পুত্র সংক্রান্ত জাহেলী রীতি নির্মূল করার জন্য নিজেই নিজের পালক পুত্রের (যায়েদ রা: ইবনে হারেসা) তালাক দেয়া স্ত্রীকে (জয়নব রা: ইবনে জাহশ) বিয়ে করেন। 

জাহেলি যুগের প্রথা ছিল যে যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো পুত্রকে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করত, তাহলে এ পোষ্যপুত্র তার প্রকৃত পুত্র বলে গণ্য হতো। এ পোষ্যপুত্র সব ক্ষেত্রে প্রকৃত পুত্রের মর্যাদাভুক্ত হতো। তারা প্রকৃত সন্তানের মতো সম্পদের অংশীদার হতো এবং বংশ ও রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব নারীর সঙ্গে বিয়ে-শাদি হারাম, এ পোষ্যপুত্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এরূপ মনে করা হতো। বিয়েবিচ্ছেদ সংঘটিত হওয়ার পর ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা যেরূপ হারাম, অনুরূপভাবে পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও হারাম বলে মনে করা হতো। ইসলাম চিরতরে এ প্রথাকে বিলুপ্ত করেছে।


জয়নবের সঙ্গে জায়েদের বিয়ে : জায়েদ বিন হারেসা (রা.) যৌবনে পদার্পণ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় ফুফাতো বোন জনয়ব বিনত জাহশকে তার কাছে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান। জায়েদ (রা.) যেহেতু মুক্তিপ্রাপ্ত দাস ছিলেন, সেহেতু হজরত জনয়ব ও তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জাহশ এ বিয়েতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, আমরা বংশমর্যাদায় তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন—‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে যে তা অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টাতায় পতিত হয়। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬) জনয়ব ও তাঁর ভাই এ আয়াত শুনে তাঁদের অসম্মতি প্রত্যাহার করে নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যান। অতঃপর চতুর্থ হিজরিতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ১০ দিনার, যা প্রায় চার ভরি স্বর্ণ পরিমাণ ও ৬০ দিরহাম বা ১৮ তোলা রৌপ্য পরিমাণ। তা ছাড়া দেওয়া হয়েছিল একটি ভারবাহী জন্তু, কিছু গৃহস্থালির আসবাবপত্র, আনুমানিক ২৫ সের আটা ও পাঁচ সের খেজুর। মহানবী (সা.) নিজের পক্ষ থেকে তা প্রদান করেছিলেন। (ইবনে কাসির) মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ মোতাবেক জায়েদ বিন হারেসার সঙ্গে জয়নব (রা.)-এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে মিল হয়নি। জায়েদ (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে জনয়ব (রা.) সম্পর্কে ভাষাগত শ্রেষ্ঠত্ব, গোত্রগত মর্যাদা ও আনুগত্যে শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগ উত্থাপন করেন।


মহানবী (সা.)-এর কাছে ওহি : মহানবী (সা.)-কে ওহির মাধ্যমে জানানো হয় যে জায়েদ (রা.) জনয়ব (রা.)-কে তালাক দিয়ে দেবেন। অতঃপর আপনি তাঁর পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবেন। একদা হজরত জায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে এসব অভিযোগ পেশ করতে গিয়ে হজরত জনয়বকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মহানবী (সা.) যদিও ওহির মাধ্যমে অবগত হয়েছিলেন, তার পরও দুটি কারণে তিনি তালাক দিতে নিষেধ করেন। একটি হলো—তালাক দেওয়া যদিও শরিয়তে জায়েজ, কিন্তু তা অপছন্দনীয় কাজ। অপরটি হলো, মহানবী (সা.)-এর অন্তরে এরূপ ধারণা সৃষ্টি হয় যে জায়েদ তালাক দেওয়ার পর যদি তিনি জয়নবের পাণি গ্রহণ করেন, তবে আরববাসী বর্বর যুগের প্রচলিত প্রথানুযায়ী এ অপবাদ রটাবে যে রাসুল (সা.) পুত্রবধূকে বিয়ে করেছেন।


মহানবী (সা.) পঞ্চম হিজরিতে মদিনায় জনয়বকে বিয়ে করেন। তখন রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ৫৮ বছর, আর জনয়ব (রা.)-এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। এ বিয়ে হয়েছিল সরাসরি আল্লাহ তাআলার নির্দেশে। তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন, আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন, তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। তখন আপনি (আপনার) অন্তরে এমন বিষয় গোপন করেছিলেন, যা আল্লাহ প্রকাশ করে দিয়েছেন (যে দত্তক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পত্নিত্বে বরণ করতে হবে)। আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন, অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর জায়েদ যখন জয়নবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ করলাম। যাতে পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিয়ে করার ব্যাপারে মুমিনদের অন্তরে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব্ব না থাকে। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৭)


জনয়ব (রা.)-কে মহানবী (সা.) বিয়ে করলে মুনাফিকরা বিরোধিতার মহা উপকরণ হাতে পায়। তারা প্রচার করতে থাকে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এতই নারীলোলুপ যে স্বীয় পুত্রবধূকে পর্যন্ত বিয়ে করেছেন। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন, মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত (সুরা : আল-আহজাব : ৪০)


আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সংগত। যদি তোমরা তাদের পিতৃপরিচয় না জানো, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। ’


জয়নব (রা.)-এর বিয়ের বৈশিষ্ট্য :


এ বিয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :


১. এ বিয়ে হয়েছিল আল্লাহ তাআলার নির্দেশে। হজরত জনয়ব (রা.) অন্যান্য স্ত্রীদের ওপর গর্ব করে বলতেন, তোমাদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন তোমাদের পিতারা, আর আমার বিয়ে সম্পন্ন করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। (নাসায়ি)


২. পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা যাবে না, জাহেলি যুগের এ কুসংস্কারকে এ বিয়ের মাধ্যমে রহিত করা হয়েছে।


৩. দাস ও স্বাধীনদের মধ্যে সমতা আবশ্যক, তা এ বিয়ের ফলে প্রতীয়মান হয়েছে।


৪. এ বিয়ের পর পর্দার আয়াত তথা সুরা আল আহজাবের ৫৩ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। তখন থেকে রাসুল (সা.) স্ত্রীদের দরজায় কম্বলের পর্দা ঝুলিয়ে দেন।


৫. হজরত জনয়ব (রা.) বলেন, আমার তিনটি বৈশিষ্ট্য। তা হলো :

ক) আমার দাদা ও রাসুল (সা.)-এর দাদা একজন।

খ) আমার বিয়ে হয়েছে আকাশে।

গ) আমার বিয়েতে দূতের কাজ করেছেন স্বয়ং জিবরাঈল (আ.)


নবীজির পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ সম্পর্কে

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷


ইসলাম বিদ্বেষীরা বলে রাসূল (সা) পুত্রবধূকে বিয়ে করেছিলেন, সত্যি কি তাই?? আসুন সত্যিটা জানি… নবিজীর পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার কারন— জায়েদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা অনেক আজবাজে কথা বলে। তবে যারা এব্যাপারে জানে তারা ঠিক মন্তব্যই করে। তখন আরবে প্রচলন ছিল উঁচু বংশ নিচু বংশকে বিয়ে করবেনা। কিন্তু ইসলাম জাত বংশ প্রত্যাখ্যান করে কেবল সাম্যবাদের প্রচার করে। এদিক দিয়ে নবিজী স্থির করলেন, তার আপন ফুপাতো বোন জয়নাবের সাথে নবীজির দাস জায়েদ বিন হারিসের বিয়ে দেবেন। কিন্তু এতে জায়েদ বা জয়নব কেউই সায় দিলনা। কারন জায়েদ জয়নবের মতো উঁচু বংশের মেয়েকে বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছিল আর জয়নব একজন দাসের স্ত্রী হতে আপত্তি করছিলেন। কারন দাস প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন বলে স্বভাবসুলভ ভাবেই নবিজী জায়েদকে পুত্র ঘোষণা করলেও আসলে জায়েদ হচ্ছেন মা হাদিজার কৃতদাস। এটা ছাড়াও আবার জায়েদের আপন পিতাও ছিল জীবিত। অতএব কি করে এই সম্পর্ক সামাজিক ভাবে স্বীকৃত পেতে পারে তা ভুলে আল্লাহর নবীর সম্মানে শেষ পর্যন্ত জায়েদ এবং জয়নব দুজনই এই বিয়ে মেনে নিল। কিন্তু বছর খানিক যেতে না যেতেই স্বামী স্ত্রীতে বাঁধল কলহ। কারন অন্যদের প্ররোচনায় জয়নব মন থেকে কিছুতেই জায়েদকে নিজের জন্য যোগ্য পুরুষ ভাবতে পারছিলেন না আর জায়েদও জয়নবের এই আচরণ মানসিক ভাবে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। সব মিলিয়ে জায়েদ মানসিক সংকীর্ণতায় ভুগে নবিজীর কাছে যেয়ে জয়নবকে তালাক দেবার জন্য মনস্থির করলেন। কিন্তু নবিজী বার বার তা মানা করে জায়েদকে ধৈর্য ধরতে বললেন। জায়েদ যদি জয়নবকে সত্যি সত্যি তালাক দিয়েই বসে তাহলেতো সেটা হবে ভয়ংকর। কারন যতই উচ্চ বংশীয় হোক না কেন, একজন দাসের পরিত্যাক্ত স্ত্রীকে এই বর্বর সমাজের কেউই বিয়ে কতবেনা। কিন্তু শেষমেশ জায়েদ আর নবিজীর কথায় ধৈর্য ধরতে পারলনা। মানবোচিত কারনে জয়নবকে ঠিকই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করলো আর জয়নব এতে মহা সমস্যায় পড়লো। কারন তৎকালীন আরবে যেসব মহিলারা বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্ত হতো তাদেরকে নর্দমার কীট হিসেবেও কেউ মূল্যায়ন করতো না। তাই বাধ্য হয়ে নবিজী নিজেই জয়নবকে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন আর জয়নবেরও এটাই আশা ছিল যে নবিজীকে বিয়ে করে একজন পায়গম্বরের স্ত্রী হবার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? কারন বর্বর কাফেররা এমনিতেই বিরুপ। তার ওপর আবার এই ঘটনা ঘটলে, কাফেররা তার নামে আরও বেশী কুৎসা রটাবে। এমন দ্বিধায় যখন নবিজী ভুগছিলেন তখন আল্লাহ ওনার এই ব্যাপারটি কে অপছন্দ করল । কারন যিনি নবী তিনি কখনো মানুষকে ভয় পাবেন না, ভয় পাবেন একমাত্র আল্লাহকে। তাই সুরা আজহাবে আল্লাহ বললেন-“আপনি নিজের অন্তরে যা গোপন রেখেছিলেন তা আল্লাহ প্রকাশ করে দিচ্ছেন। আপনি মানুষের নিন্দা ও অপবাদকে ভয় করেছিলেন কিন্তু আল্লাহকে ভয় করাই ছিল আপনার জন্য অধিকতোর সঙ্গত।” সূরা আহাযাবে আল্লাহ আরো বলেন- “আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।” এখানে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছে পোষ্যপুত্র কখনো পুত্র হতে পারে না। তাই সব শেষে ইসলাম বিরোধী কুচক্রীদের একটা কথাই বলবো, যদি সত্যি জায়েদ নবিজীর পুত্র হতো তাহলে সে কি করে জয়নবকে বিয়ে করতে পারতো? নবিজীর ফুপাত বোন হবার কারনে জয়নব তো সম্পর্কে জায়েদের ফুপু হয়!! ইসলাম কি ফুপুকে বিয়ে করার অনুমতি দ্যায়?


আল্লাহ বলেন-

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَٰكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

অনুবাদঃ মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।

(সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৪০

Post a Comment

0 Comments