আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। 

আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় ভালো আছেন,

প্রিয় দর্শক ,,

কুরবানি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। অনেকেই হজরত ইসমাইল আলাইহস সালামকে কুরবানি ও কুরবানির পশু সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। হজরত ইবারাহিম আলাইহিস সালাম কি কুরবানি করেছিলেন? আর কুরবানির পশুটি দেখতেই বা কেমন ছিল?


এ সম্পর্কে আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ও তাফসিরে ইবনে কাসিরে রয়েছে সুস্পষ্ট কিছু বর্ণনা। তা তুলে ধরা হলো-

হজরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, ইবরাহিমের হাতে জবাই করা জন্তুটির (দুম্বার) নাম ছিলো ‘জারির’। যেটি নবি ইসমাঈলের জন্য জবাই করা হয়েছিলো।


হজরত ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু জন্তুটিকে ভেড়া বলে উল্লেখ করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আস-সাওরি আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান ইবনে খাইসাম ও সাঈদ ইবনে জুবায়ের বর্ণনা করেন যে, ‘এটা ছিল একটি ভেড়া। যা চল্লিশ বছর ধরে জান্নাতে বেড়িয়েছে।’ (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া)


তাফসিরে ইবনে কাসিরে এ জন্তুটির গঠনগত কিছু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তাহলো-

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মিনা প্রান্তরে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করে সামনে অগ্রসর হয়ে পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের জবেহ করার জন্য শোয়ালেন। সে সময় হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের গায়ে সাদা কাপড় দ্বারা আবৃত ছিল। তিনি পিতাকে এ কাপড়টি খুলে নিতে বললেন, যাতে এ কাপড় দ্বারা (জবেহ করার পর) দাফন দেয়া হয়। এ অবস্থায় বাবা হয়ে সন্তানের দেহ অনাবৃত করা অতি বিস্ময়কর (কঠিন) ব্যাপারই বটে।


এমন সময় শব্দ এলো- ’হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে।’ তখন তিনি পেছনে ফিরে একটি দুম্বা দেখতে পেলেন, যার শিং ছিল বড় বড় এবং চোখ দুটি ছিল অতি সুন্দর।’


হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ জন্যই আমরা কুরবানির জন্য এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করে থাকি। তিনি আরও বলেন, ওটা জান্নাতের দুম্বা ছিল। ৪০ বছর ধরে সেখানে পালিত হয়েছিল। এটা দেখে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্রকে ছেড়ে সে (দুম্বাটির) দিকে ধাবিত হলেন।


প্রথমে জামরায় এসে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করলেন। শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে জামরায়ে উসতায় চলে আসে। সেখানে তিনি ৭টি কংকর নিক্ষেপ করেন। আবার প্রথম জামরায় এসে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করলেন।


জামরা থেকে কুরবানির স্থানে এসে দুম্বাটি কুরবানি করলেন। এ দুম্বার মাথাসহ শিং কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখেন। পরে ওটা শুকিয়ে যায়। ইসলামের আবির্ভাবের পর্যন্ত তা সেখানেই বিদ্যমান ছিল।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি নিজ সন্তান হজরত ইসমাইলকে কুরবানির এ নির্দেশ ও উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্য ও আল্লাহর ভয়ের পরীক্ষামাত্র। সে পরীক্ষায় পিতা-পুত্র যেমন উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তেমনি তাদের তাকওয়ার পরিচয়ও ফুটে উঠেছিল।


কুরবানির ঐতিহাসিক ঘটনার এ শিক্ষা মুসলিম জাতির জন্য খুবই জরুরি। তবেই মানুষ দুনিয়া ও পরকারে লাভ করবে শান্তি ও নিরাপত্তা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ নিয়মে শুধু মহান আল্লাহর জন্য কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।