আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
সুপ্রিয় দর্শক মন্ডলী আশা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানি ও দয়ায় আপনারা সবাই ভাল আছেন।
প্রিয় দর্শক ,,
আজকের এই ভিডিও থেকে আপনি জানবেন হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মদিন কি ঘটেছিল? ফাতেমা রাঃ এর জন্মের এই বিস্ময়কর ঘটনাটি জানতে আপনাকে অবশ্যই ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে। হযরত ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়ালাহু আনহা মুসলিম ইতিহাসের এক অনন্য সাধারণ রমণী । তাকে জান্নাতের রানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনা সমূহের মধ্যে একটি শিক্ষনীয় ও বিস্ময়কর ঘটনা হলো ফাতেমা-তুজ-জোহরা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মের ঘটনা। এই দিক থেকে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন,, যাতে হযরত ফাতিমা রাঃ এর মত এমন একটি সন্তানকে জন্ম দিতে পারেন যিনি ইহকাল ও পরকালের সর্বোত্তম নারী।
সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে সর্ব শেষ পর্যন্ত এমন কোনো নারীই ফাতিমার মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে না। মায়ের উদরে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার নূরের বিচ্ছুরণ এবং তার জন্মের ঘটনার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ বিভিন্নভাবে বিপুলসংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা হলো,, তাফসীরে বরাতে আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছিলেন যখন এই আয়াতটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হলো,, তারাই যারা ঈমান এবং উত্তম আমলের অধিকারী তারা পবিত্রতম জীবন এবং সর্বোত্তম পরিণতির অধিকারী । আয়াতটি নাজিল এর পর একজন সাহাবী ,,যার নাম ছিল মিকদাদ। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন ,,হে আল্লাহর রসূল এই আয়াতে যে “তুবা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার উদ্দেশ্য কি ?? রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন তুবা বেহেশতের একটি বৃক্ষ ,, যাএত বড় ও বিস্তৃত যে কেউ যদি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে ওই বৃক্ষের ছায়ায় পরিভ্রমণ করে ,তাহলে 100 বছরেও সেই ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারবেনা । সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম হযরত ফাতিমা কে অত্যন্ত পছন্দ করতেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের একজন স্ত্রী বললেন হে আল্লাহর রসূল আপনি কেন ফাতেমাকে এত বেশি ভালোবাসেন?? যা অন্য কোন সন্তানকে বাসেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জবাব ছিল এরকম,, যখন আমি শবে মেরাজে উর্দ্ধগগনে ভ্রমণ করেছিলাম, জিবরাইল আলাইহিসসালাম আমাকে তুবা বৃক্ষের নিকটে নিয়ে গেলেন । সেই বৃক্ষ থেকে একটি ফল ছিড়ে আমায় দিলেন । যা আমি খেয়েছিলাম। তারপর তার হাত দুটো আমার কাঁধের মধ্যভাগে বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন,, হে মুহাম্মাদ!! আল্লাহ তাআলা হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাধ্যমে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মের সুসংবাদ দিচ্ছেন। যখন মিরাজ হতে ধরণীতে ফিরে আসলাম এবং হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে রাত্রিযাপন করলাম। তখন খাদিজার উদরে ফাতিমার ভ্রুন প্রতিস্থাপিত হলো । এরপর থেকে যখনই বেহেশতের কথা চিন্তা করতাম। তখনই ফাতিমাকে কাছে ডেকে নিতাম এবং তার কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রান নিতাম । কারণ সে হল হাওয়ায়ে ইনসিয়া অর্থাৎ এই ধরণীতে মানুষরূপে বেহেশতী রমণী। হযরত ফাতিমা জন্ম গ্রহণ প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাক লিখেছেন যে ,,একমাত্র ইব্রাহিম ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সবকটি সন্তানই নবুওয়াত লাভের পূর্বে জন্মলাভ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন যেই বছর নবুওয়াত লাভ হয় সেই বছর অহি প্রাপ্তির পূর্বেই হযরত ফাতেমার জন্ম হয়েছিল ।
এই প্রসঙ্গে ইবনুল জাওযী বলেন,,নবুওয়াত লাভের পাঁচ বছর পূর্বে যখন কাবাগৃহ সংস্কার করা হচ্ছিল,, তখন হযরত ফাতেমার জন্ম । হিজরী ২য় সনে হযরত আলী রাঃ এর বিবাহ হয় । হযরত আলী সম্পর্কে বর্ণনায় আছে যে, তিনি আট বছর বয়সে ইসলাম কবুল করেছিলেন। সেই হিসাব অনুসারে বিবাহের সময় তার বয়স হবার কথা 21 বছর 5 মাস। হযরত আলীর তরফ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহিসালাম তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন,, মোহরানা আদায় করার মত কোন কিছু তার কাছে আছে কিনা?? হযরত আলী উত্তরে বললেন একটিমাত্র ঘোড়া এবং একটি বর্ম যা কিনা সমরের সময় ব্যবহৃত পোষাক সেটি রয়েছে। তিনি বর্মটি বিক্রি করে মোহরানার খরচ সংগ্রহ করলেন । হযরত আলী বর্মটি 480 দিরহামের বিনিময় হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট বিক্রি করে দেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম কিছু অর্থ দিয়ে হযরত বেলাল কে পাঠালেন যেন কিছু সুগন্ধি কিনে আনা হয়। বেলাল সুগন্ধি নিয়ে আসলেন তারপর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম হযরত আলীর সাথে ফাতিমাকে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে বিবাহ দিলেন। কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়, কন্যা বিদায়ের সময় রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম একটি খাটিয়া, বিছানা, একটি আটা পিষার চাক্কি। এবং পানি তোলার একটি মশক উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছিলেন। সে শক্ত জিনিস দুটো মা ফাতেমার ইন্তেকাল পর্যন্ত তার সাথেই ছিল। বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত হযরত আলীর কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সংসারেই থাকতেন। বিবাহের পর হযরত ফাতেমাকে নিয়ে বাস করার জন্য যখন বাড়ির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । তখন হারেস বিন নোমান আনসারী তাদের বাস করার মত একটি বাড়ি দিলেন। হযরত ফাতিমা কে নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই বাড়িতে উঠলেন। এবং বসবাস শুরু করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম সব সময় জামাতা আলী এবং কন্যা ফাতেমা রাদিয়ালাহু আনহার মাঝে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখার মতো পরিবেশ এবং অবস্থা করে তুলবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতেন। সাংসারিক ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে কোন রকম মনোমালিন্য দেখা দিলে তিনি উভয়ের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দিতেন। এবং উভয়ের সুখময় সংসার আরো সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলতেন ।
একদিন এমন একটি দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম হাসিমুখে হযরত ফাতেমার বাড়ি থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন,, তার নূরানী চেহারা মোবারক এ আনন্দের ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল । পথিমধ্যে জনৈক সাহাবীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়, সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ কিছুক্ষণ আগেও আমরা আপনাকে উদ্বিগ্ন দেখছিলাম, কিন্তু এখন যে আপনাকে বড়ই হাসিখুশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কি ??উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেন,, এই মাত্র আমি আলী ও ফাতেমার মাঝে দাম্পত্য কলহ মীমাংসা করে এসেছি। তারা দু'জনই আমার কাছে বড় আদরের পাত্র ।তারা আজ আনন্দিত। সেই আনন্দ আমার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। একবার হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের অজান্তে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি রুক্ষ ব্যবহার করে বসলেন। ফাতিমা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের দরবারে অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলেন। পেছনে পেছনে হযরত আলী ও বিমর্ষ বদনে দোজাহানের সম্রাটের নিকট হাজির হলেন্ ।হযরত ফাতেমার অভিযোগ শ্রবণ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেন ওগো আমার নয়নের মনি, আমার ফাতিমা তোমার বোঝা উচিত যে আলী কেমন হৃদয় বান স্বামী যে,, এমন পরিস্থিতিতেও বিমর্ষ বদনে নীরবে নিজের স্ত্রীর কাছে চলে এসেছে। এ কথায় হযরত আলীর অন্তরের ভয় ভীতি এবং জড়তা নিমিষেই দূর হয়ে গেল। শ্রদ্ধা এবং লজ্জায় মাথা আপনা থেকেই নূ্ইয়ে আসলো। তারপর তিনি হযরত ফাতিমার সামনে বিনম্র স্বরে এই প্রস্তাব করলেন যে আর কোনদিন আমি তোমার রুচিবিরুদ্ধ কোন কথা মুখে উচ্চারণ করব না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালাম মুচকি হাসলেন। হযরত ফাতেমা ও না হেসে পারলেননা। তিনি হযরত আলীর দিকে চেয়ে বললেন চলুন বাড়ি যাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এই বিস্ময়কর রমণীর জীবনী থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণের তৌফিক দিন আমিন
0 Comments