আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ , আশা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানি ও দয়ায় আপনারা সকলেই ভাল আছেন।
প্রিয় দর্শক,,
শীতকাল আসার সাথে সাথে সাধারণত জ্বর, সর্দি-কাশি, বেড়ে যায়। মুখ তেতো হয়ে যায়, খাদ্যে রুচি থাকে না।
অসুস্থ কেউ আশেপাশের সুস্থ মানুষকে দেখলে মনে করে, সবাই সুখে আছে, আমি কেবল অসুখে!
মনে করুন আপনার কাছে একজন এক লক্ষ টাকা পান?-
আপনি সময় মত টাকা দিতে পারছেন না, টাকা না দেওয়ার কারণে, ঐদিক থেকে তাড়া আসছে, এদিকে আপনি চিন্তায় মরে যাচ্ছেন। আপনার সময় কাটছে, কিন্তু ঘর দুশ্চিন্তায়। কোন ভাবেই টাকা ফেরত দেবার কোন উপায় বের করতে পারছেন না। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না।
হঠাৎ একদিন ঐ পাওনাদার এসে আপনাকে বললো,-
তুমি যদি শীতের সকালে খালি পায়ে পাঁচ কিলোমিটার হেটে জেতে পার, তাহলে তোমার ঋণের টাকা আমি মাফ করে দেবো। তোমাকে টাকা দিতে হবে না,
এরাকম একটা অফার পেলে তখন আপনার কেমন লাগবে?-
হাঁ, শীতের সকালে খালি পায়ে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে আপনার কষ্ট হবে, কিন্তু এই কষ্টের বিনিময়ে আপনার এক লক্ষ টাকার ঋণ পরিশোধ হবে। এক লক্ষ টাকার কাছে আপনার এই কষ্ট তখন তুচ্ছ মনে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি সেই প্রস্তাব মেনে নিবেন সন্তুষ্টচিত্তে।কারণ, কষ্টের মাধ্যমে যে স্বস্তি পাবেন, সেই স্বস্তি আপনাকে কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।
আমাদের যখন রোগ হয়, আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন যদি কেউ আমাদেরকে আকর্ষণীয় কোন অফার দেয়? সেই অফার পেলেও তো আমাদের রোগের শোঁখ ভুলে যাবার কথা।
অসুখকে কল্যাণকর মনের করার কথা?-
একজন মুমিনের কাছে অসুখের বার্তা… সুখময়। ইসলাম তাকে অসুস্থতার মধ্যেও আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে। ( সহি বুখারি ৫৬৪২ )
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “মুসলমানের উপর যে সকল যাতনা, রোগব্যাধি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠ ও প্রেশানি আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা দেহ বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।” ( সহি বুখারি ৫৬৪২ )
তারমানে অসুখ বা কোন বিপর্যয় আমাদের গুনাহ মাফের কারণ হিসেবে হাজির হয়। যে অসুখ আমাদের গুনাহ মাফের কারণ। সেই অসুখকে কি গালাগালি দেওয়া যায়। সেই অসুখের উপর কি বিরক্ত হওয়া যায়।
রাসূল (সাঃ) এর এক সাহাবীর নাম ছিল উম্মে সায়িব (রা:) !-
একবার তিনি ভীষণ অসুস্থ হন, জ্বরে কাঁপতে থাকেন। এমনকি জ্বরকে গালি দিতে থাকেন। জ্বরের প্রতি তার এমন বিরক্তি দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি জ্বরকে গালি দিও না। কেননা, এটি আদম সন্তানের পাপরাশি মুছে দেয়, যেমন ভাবে কামারের চুল্লি লোহার মরিচা দূর করে।” ( সহি মুসলিম ২৫৭৫ )
বিপদ মুসলিমের জীবনে রহমত হয়ে আসে। মুসলিম কোন অবস্থাতেই হতাশ হতে পারে না। তার সবকিছুই কল্যাণকর। আমরা অসুস্থ হলে অসুস্থতাকে সাদরে বরণ করব, যথাসাধ্য চিকিৎসা করব। কেননা চিকিৎসা করানো নবীজী (সাঃ) এর সুন্নাত, কিন্তু অসুস্থ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করব না।
আমরা অনেকেই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা-আলার ক্ষমার মহৎ গুণ নিয়ে স্ংশয়ে ভুগি। আমরা পাহাড় সমান গুনাহ করে ফেলেছি। রব আমাদের মাফ করবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। মাঝে মাঝে এটাও ভাবী যে, রব্ব যদি অলৌকিক ভাবে গুনাহ মাফের কোন বার্তা পাঠাতে্ তাহলে কতই না ভালো হতো।,
মানুষ তো এমন যে-
সে আল্লাহর অবাধ্য হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার সামনে আর কোন পাপাচার বাকি থাকে না। যত ধরনের পাপাচার করা সম্ভব, সব সে করেছে। সবকিছু যখন শেষ হয়ে যায়, হঠাৎ করে তখন তার বোধোদয় হয়। এ আমি কি করলাম? তার মনে হয়, সে এমন পাপাচারে লিপ্ত ছিল, যাতে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। সে এক পর্যায়ে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে।
কিন্তু আল্লাহ কি বলেন-,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ۞
( সূরা আয-যুমার, আয়াত ৫৩ )
অর্থাৎ “ও আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।” ( সূরা আয-যুমার, আয়াত ৫৩ )
পাপ করে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করলে আল্লাহ পূর্বের পাপ গুলো ক্ষমা করে দেন। এর চেয়েও
উত্তম সুসংবাদ আর কি হতে পারে?
অপরাধী করে অফিসের বসকে সরি বললে বস সর্বোচ্চ ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু তিনি কি সরি বলার জন্য খুশি হবে। নিশ্চয়ই না। যে তার এত বড় ক্ষতি করলো তিনি কেন তার উপর খুশি হবেন। কিন্তু আল্লাহ তাঁর তওবাকারী বান্দাকে শুধু ক্ষমা করেই দেন না, তাকে ভালবাসেন।
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ
( সূরা বাকারা, আয়াত ২২২ )
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাহ্কারীদেরকে ভালবাসেন” ( সূরা বাকারা, আয়াত ২২২ )
যে আল্লাহ আমাদেরকে এত ভালবাসেন, তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে কিসের এত লজ্জা?
গুরুতর অপরাধ করা সত্ত্বেও শুনি শুধুমাত্র “ সরি ” বললেই তিনি মাফ করে দিবেন, তখন আমরা দৌড়ে যাই তাকে “ সরি ” বলতে। আর রাত দিন আল্লাহর অবাধ্য হওয়া সত্বেও আল্লাহ যেখানে ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন, সেখানে আমরা কেন ক্ষমা প্রার্থনা করবো না। ক্ষমা চাইলে আল্লাহ শুধু ক্ষমাই করবেন না, ক্ষমাপ্রার্থীকে ভালোবাসবেন।
ইসলামের সৌন্দর্য হলো ইসলাম আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে। হতাশায় তিমির ছিন্ন করে, আশার আলোর হাতছানি নিয়ে, ইসলাম আমাদের সামনে হাজির হয়। আর প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানায় ।
মুমিন বান্দাকে বিপদে ভয় পেলে চলবে না, মুমিনের কষ্টও সম্মান এবং মর্যাদার কারণ। তাই মুমিন বান্দা নিজেকে ঈমানি তেজে শক্তিশালী করবে। আল্লাহর কাছে হিম্মাত ও সাহায্য প্রার্থনা করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুখের সময় কৃতজ্ঞতা ও দুঃখের সময় ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর একান্ত রহমত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments