আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ , আশা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানি ও দয়ায় আপনারা সকলেই ভাল আছেন।
প্রিয় বন্ধুরা,,
জান্নাত হবে অসীম ঐশর্য ও অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর অনাবিল এক জগৎ। মানুষ ও জিন জাতি পার্থিব জীবনের পুণ্যকর্মের পুরস্কার হিসেবে প্রবেশ করবে পরম সুখ-শান্তি এবং ভোগ-বিলাসের অকল্পনীয় জগৎ জান্নাতে। প্রত্যাশিত নয়নাভিরাম জান্নাতে সর্বপ্রথম অথবা সর্বশেষ কে ও কারা প্রবেশ করবেন এ কৌতূহল সব মুমিনের।
প্রিয় দর্শক,,
সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি, যে জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তি পাবে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৬, ‘
কুরআন মাজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥْ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸﺎﺀُ ‘আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া সকল গুনাহই যার সম্পর্কে ইচ্ছা করবেন ক্ষমা করে দেবেন। [সূরা নিসা (৪) : ৪৮]
#কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে মুসলমান হয়েও প্রথমবারে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। তারা ওই গুনাহর কারণে প্রথমে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। এরপর আল্লাহ চাইলে তারা জান্নাতে যাবে। ওই ধরনের কিছু গুনাহ নিম্নরূপ—
হারাম খাদ্য ভক্ষণকরা,আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরা,প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া,মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া,দাইয়ুস নারী,অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি হওয়া,প্রতারণাকারী শাসক, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকরা,রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাফরমানী করা,দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকরা,অকারণে তালাক কামনাকারী নারী,ইত্যাদি,,,,
আল্লাহ তালা মুসলিম উম্মাহকে ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন।
কালিমার দাওয়াত গ্রহণকারী সব ব্যক্তিকেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ ব্যাপারে অনেক বড় একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ তাআলা বিচারকাজ শেষ করার পর ‘লা ইলাহা ইল্লাহু’র সাক্ষ্যদাতাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন এবং ফিরিশতাদেরকে আদেশ করবেন তাদের বের করে আনতে। সিজদার চিহ্ন দেখে ফিরশতারা তাদেরকে চিনতে পারবে।
আর আল্লাহ তাআলা বনি আদমের সিজদার স্থানগুলিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং ফিরিশতারা তাদেরকে এমতাবস্থায় বের করবে যে, তখন তাদের দেহ থাকবে কয়লার মতো। তারপর তাদের দেহে পানি ঢেলে দেয়া হবে। যাকে বলা হয় ‘মাউল হায়াত’ বা ‘সঞ্জীবনী পানি’। সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা আবর্জনায় যেরূপ উদ্ভিদ জন্মায়, পরে এগুলো যেরূপ সজিব হয় তারাও সেরূপ সজিব হয়ে যাবে।
এসময় জাহান্নামের দিকে মুখ করে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকবে আর বলবে, হে প্রভু! জাহান্নামের লু হাওয়া আমাকে ঝলসে দিয়েছে, এর জ্বলন্ত আঙ্গার আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সুতরাং তুমি আমার চেহারাটাকে জাহান্নামের দিক থেকে ঘুরিয়ে দাও। এভাবে সে আল্লাহকে ডাকতে থাকবে। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দিই তবে তুমি অন্যটির প্রার্থনা করবে? লোকটি বলবে, না। আল্লাহ, তোমার ইযযতের কসম! আর অন্যটি চাইব না।
সুতরাং তার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর সে বলবে, হে প্রভু! তুমি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দাও। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলনি যে, তুমি আমার কাছে আর কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য আদম সন্তান! তুমি কতইনা গাদ্দার! সে এরূপই প্রার্থনা করতে থাকবে। তখন আল্লাহ বলবেন, সম্ভবত আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দিই, তবে তুমি অন্য আরেকটি আমার কাছে দাবি করবে। লোকটি বলবে, না। তোমার ইযযাতের কসম! অন্যটি আর চাইবো না।
তখন সে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে এ মর্মে ওয়াদা করবে যে, সে আর কিছুই চাইবে না। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। সে যখন জান্নাতের মধ্যস্থিত নিয়ামতগুলি দেখতে পাবে, তখন আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষন সে চুপ করে থাকবে। এরপরই সে বলতে থাকবে, হে প্রভূ! তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। তখন আল্লাহ বলবেন তুমিকি কি বল নাই যে, তুমি আর কিছু চাইবে না? আফসোস, তোমার জন্য হে আদমসন্তান! তুমি কতইনা গাদ্দার। লোকিটি বলবে, হে প্রভূ! তুমি আমাকে তোমার সৃষ্টি জীবের মাঝে সবচেয়ে হতভাগ্য করো না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলা হেসে ফেলবেন- আর আল্লাহ যখন হেসে ফেলবেন তখন তাকে জান্নাত প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দিবেন। এরপর যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাকে বলা হবে, তোমার যা ইচ্ছে হয় আমার কাছে চাও। সে (বিভিন্ন) আরযু করবে, এমনকি তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন এগুলো তোমার এবং এর সমপরিমাণও তোমার। হজরত আবু হুরায়রা বলেন, ঐ লোকটি হচ্ছে সর্ব শেষে জান্নাতে প্রবেশকারী লোক। (বুখারি)
এ জন্য প্রত্যেক বনি আদমের উচিত, আল্লাহর রহমতের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের পাশাপাশি তার সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার রহমতের ওপর অবিচল রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments