আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় ভালো আছেন,
প্রিয় দর্শক ,,
তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। এই নামাজ ঘুমকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে গভীর রজনীতে পড়তে হয়। তাই এর সওয়াব ও ফজিলত অনেক অনেক বেশি। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ) আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে চাদর আবৃত, রাতের সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-২) প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে এ নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। প্রিয়নবির প্রতি কিছু সময় নামাজ পড়ার নির্দেশ ছিল না বরং রাতের কিছু অংশ ছাড়া সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ ছিল।
এক মাঝবয়সী আফ্রিকান মহিলা একদিন কান্না করতে করতে বলেন,,
আমার মেয়ে অনেক জেদি। সে এমন কিছু আবদার করেছিল, যা আমরা সবাই বুঝতাম যে বিষয়টা অসম্ভব। তার বয়স হচ্ছিল,, তার জন্য আমাদের বংশীয় ছেলেদের কত প্রস্তাব আসে। কিন্তু সে রাজী হয়না। সে কালো চামড়ার,, অনেক লম্বা আর স্বাস্থ্যবতী। আমাদের গোত্রের এমন মেয়ে মানে অনেক সুন্দরী। কিন্তু এই আরবে তো কাল স্বাস্থ্যবতী মেয়েরা সুন্দরী না । আর সাদা চামড়ার পাতলা ফিনফিনে মেয়ে পছন্দ করে। তো আমার মেয়ের ইচ্ছে সে আরবের সুন্দর ফর্সা চামড়ার একজন ছেলের বউ হবে।
আমরা তাকে অনেক বকা দিতাম,, বোঝাতাম,, যে এমন আশা করলে জীবনে বিয়ে হবে না। মেয়ে বলতো আমার বিয়ে কি তোমরা দিবা?? নাকি আমার আল্লাহ দিবেন। কদিন পরে আমার বড় ছেলে 1 আরবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আনলো। আমরা সবাই খুশি হলাম অনেক। কিন্তু আমার মেয়ে না করে দিল। কারন সে আরব লোকটা বৃদ্ধ ছিল। আর তার আগের তিনজন বউ ছিল। আমার মেয়ের খুব রাগ হলো। আর আমাদেরকে সাফ জানিয়ে দিল যে সে দ্বীনদার আরোব নীল চোখ ওয়ালা সুন্দর যুবক চায় আল্লাহর কাছে ।
তার জন্য যেন আমরা কেউ পেরেশান না হই। আল্লাহই এনে দিবেন তার সেই স্বপ্নের রাজপুত্র। আমরা বুঝেছিলাম ওর আর বিয়েই হবে না। একেতো ওর কালো চামড়া। চেয়ে বসছে সুন্দর সাদা চামড়ার আরোব। আমরা নিচু বংশীয় গরীব মানুষ। আর আরবরা সেই ধনি আর উচ্চবংশীয়। সব না হয় মানলাম। কিন্তু নীল চোখ??
এ আবার কোন পাগলামি।
আরবদের বেশি থেকে বেশি খয়ের চোখ হয়। কাল আর খয়েরি। নীল তো ইংলিশদের হয়। আমাদের তখন মনে হচ্ছিল ও আসলে বিয়ে করতে চায় না। তাই এসব আবদার করে। একদিন ওকে অনেক বকা দিয়েছি। গায়ে হাত তুলেছি। আমার মেয়ে কান্না করতে করতে বলেছে,, এক সপ্তাহের ভেতরে সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে নীল চোখওয়ালা আরব জামাইয়ের সাথে। আমরা খুব রাগ করলাম । মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। মেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে এসব বলে ওকে অনেক বকা দিয়েছিলাম । সেই এক সপ্তাহ আমার মেয়ে অনেক কান্না করেছে। জায়নামাজ বিছিয়ে সারাক্ষণ সারারাত সে কান্না করে করে তার রবের নিকট দোয়া করেছে। ঠিক সাত দিনের দিন তার জন্য এক নীল চোখ ওয়ালা সুদর্শন যুবক এর পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমরা সবাই এত বেশি খুশি হয়েছিলাম ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ওয়াল্লাহী!!!! যদি মানুষকে সিজদা করা জায়েজ থাকতো,,শিরক না হতো ,,তাহলে সেদিন আমরা সবাই আমার সেই আল্লাহু আলা মেয়ে সিজদা করতাম।
আমি অবাক হয়েছি আমার মেয়ের ইয়াকিন দেখে। ওর তাওয়াক্কুল আর দোয়ার ক্ষমতা দেখে। আমি বিয়ের দিন আমার মেয়েকে বলছিলাম,, কি বলে সে আল্লাহর কাছে দোয়া করতো?? বলল আমি সারাদিন ইস্তেগফার করতাম আর সারারাত আমার পছন্দ ব্যক্ত করে দোয়া করতাম। আর আমার ইয়াকিন ছিল আল্লাহর কাছে সবই সম্ভব। আজ আট, দশবছর আমার মেয়ে অনেক সুখেই সংসার করছে । ওদের বাচ্চা গুলো অনেক সুন্দর সুন্দর। কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ বা মাঝারি। কিন্তু মজার বিষয় ওদের সবার চোখের রং নীল। সবাই একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলো ভদ্রমহিলার এই গল্প শুনে। মহিলা প্রচুর কান্না করতে করতে গল্প বলছিল। আর সবাই মারাত্মক রকমের ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল। রাতের তাহাজ্জুদ আর ইস্তেগফার এর কি ক্ষমতা?? তা এই দুই সময়ে দোয়া না করে বোঝা যাবে না।
0 Comments