Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মা ফাতেমার কষ্টের রোজা

 আাসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ 

প্রিয় দর্শক 










হযরত ফাতিমা রা. ছিলেন নারী জাতির ইমান, আমল, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবতার আদর্শ। তার পরিবারের ওপর এ জন্যই প্রতি নামাজে দরূদ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একজন আদর্শ মা হতে হলে, হজরত ফাতেমা যাহরা রাদিআল্লাহু আনহাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ একজন আদর্শ মা-ই পারে আদর্শ জাতি উপহার দিতে।



একবার হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহুমার শৈশবে খুব জ্বর হল। কোনো ওষুধে জ্বর কমছে না। অবস্থা বেগতিক দেখে হজরত আলী রাদিআল্লাহু ও ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা তিনটি নফল রোজার নিয়ত করেছেন। বিভিন্ন ব্যস্ততায় মান্নতের রোজা পালন করতে দেরি হয়ে গেল। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, রোজা রাখবেন। কিন্তু ঘরে সাহরি খাওয়ার কিছুই ছিল না। সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখলেন।


হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু সারা দিন খেটে মাত্র কয়েকটি রুটি তৈরি করার যব পেলেন। ইফতারের আগে রুটি তৈরি হল। হজরত হাসান ও হোসাইনকে দুটি দিয়ে দু’জনে দুটি রুটি নিয়ে ইফতারের জন্য বসলেন, এমন সময় এক মিসকিন এসে করুণ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ঘরে কে আছে গো, আমি কয়েকদিন খাওয়া পাইনি। ক্ষুধার জ্বালায় আমার জীবন যাচ্ছে। থাকলে কিছু দিন? হজরত আলী কিছুই বললেন না, কারণ ফাতেমা তো না খেয়ে রোজা রেখেছে।


হজরত ফাতেমা হজরত আলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, আপনি যদি রাজি হন, তা হলে এ অসহায় মিসকিনটাকে রুটি দুটি দিয়ে আমরা সবর করি। আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘ওয়া আম্মাস সায়িলা ফালা তানহার’ কেউ চাইলে তাকে ফিরিয়ে দিও না। হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু হজরত ফাতেমা যাহরা রাদিআল্লাহু আনহার মানবপ্রেম দেখে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে রুটি দুটি মিসকিনের হাতে তুলে দিলেন।


দ্বিতীয় দিনে সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখলেন। এ দিনে সামান্য কিছু গম জোগাড় করে রুটি তৈরি করে ইফতার করতে বসলেন, এমন সময় এক এতিম অসহায় এসে কেঁদে বলল, আমি কয়েকদিন খাইনি, যদি থাকে কিছু দিন। উপোবাস থেকে রোজা রেখে সারা দিন খেটে ইফতার করতে বসে এ ধরনের অবস্থায় পড়লে আমরা কী করতাম? আহলে বাইতে রাসূলের চরিত্র ও ধৈর্য ছিল উম্মতের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।


হজরত ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা বললেন, আল্লাহর ওয়াস্তে চেয়েছে আমরা ধৈর্য ধরি, রুটি তাকে দিয়ে দিন। হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু রুটি দুটি তাকে দিয়ে দিলেন। তৃতীয় দিনও সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখলেন। তিন দিনের উপোস থাকার পর হজরত আলী আর চলতে পারছেন না। তার পরও অনেক কষ্টে কিছু যব পেলেন। রুটি তৈরি হল। তিন দিন পর ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় ইফতার করতে বসেছেন, এমন সময় একজন কয়েদি না খেয়ে কাঠ হয়ে গেছে।


ঘরের দরজায় এসে করুণ সুরে বলল, আমি কয়েদি ছিলাম, মাটির নিচের গর্তে আমাকে বহু দিন রেখে দেয়া হয়েছে। খাওয়া দেয়া হয়নি। ক্ষুধায় আমার জীবন যাচ্ছে। আমাকে খাওয়া দিন। হজরত ফাতেমা যাহরা রাদিআল্লাহু আনহা হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন, এ ক্ষুধার্থ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়া যায় না। এই বলে রুটিগুলো কয়েদিকে দিয়ে দিলেন। লাগাতার তিন দিন না খেয়ে রোজা শেষ করলেন। আল্লাহতায়ালা রাতেই আয়াত নাজিল করলেন, ‘আল্লাহর মুহাব্বতে যারা মিসকিন, এতিম ও কয়েদিদের খাবার দেয়, আর বলে আমরা এ খাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাওয়াই, তাতে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ চাই না। নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবকে ভয় করি। সেদিন ভয়ংকর ও কষ্টকর (সূরা আদ দাহার, আয়াত ৮-১০)।


Post a Comment

0 Comments