আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
সুপ্রিয় হিদায়াহ বাংলার দর্শক মন্ডলী ,,আশা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন।
প্রিয় দর্শক ,,
রাসূল (সা.) যেসব কাজ করতেন-যা আহার বা পানীয় রূপে গ্রহণ করতেন তাই আল্লাহতায়ালা সুন্নাত করে দিয়েছেন। আল্লাহর আদেশমতে, যে রাসূল (সা.)-এর আদর্শকে জীবনে বাস্তবায়িত করতে পারবে সেই হবে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম। রাসূল (সা.) বেশ কিছু খাবার খেতে বেশি পছন্দ করতেন এবং আহারের সময় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতেন।
খেজুর : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত-আমি রাসূল (সা.)কে এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ : ৩৮৩০)। রাসূল (সা.) আবারও বলেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ : ৩৮৩১)। রাসূল (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিশমিশ : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)।
তরমুজ : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেন, এর ঠান্ডা ওটার গরম কমাবে এবং এর গরম ওটার ঠান্ডা কমিয়ে দেবে। (আবু দাউদ : ৩৮৩৬)।
লাউ : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত-একবার একজন দর্জি রাসূল (সা.)কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসূল (সা.)-এর সামনে রুটি এবং গোশতের টুকরা ও লাউ মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসূল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ নিয়ে খাচ্ছেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ২৬২)।
মাখন : আতিয়্যাহ বিন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের এখানে এলেন। আমরা তার বসার জন্য আমাদের একটি চাদর পেতে দিলাম। পানি ছিটিয়ে আমরা তা তার জন্য নরম করে দিলাম। তিনি তার ওপর বসলেন। তখন আমাদের ঘরে মহান আল্লাহ তার ওপর ওহি নাজিল করলেন। আমরা তার সামনে মাখন ও খেজুর পেশ করলাম। তিনি মাখন পছন্দ করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৩৩৪)।
মিঠাই ও মধু : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বুখারি : ৫১১৫; মুসলিম : ২৬৯৫)। বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (৫৩৫৯)।
মোরগ : জাহ্দাম আল-জারমি (রহ.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমি আবু মুসা (রা.)-এর সামনে গেলাম। তিনি তখন মুরগির গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, আমার সামনে এগিয়ে এসো এবং খাবারে অংশগ্রহণ কর। রাসূলুল্লাহ (সা.)কে আমি মুরগির গোশত খেতে দেখেছি।
এ ছাড়া আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)কে আমি মোরগের গোশত ভক্ষণ করতে দেখেছি। (তিরমিজি : ১৮২৬ ও ১৮২৭)।
ঘিয়ের সঙ্গে রুটি : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসূল (সা.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এ কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৪০)।
দুধ : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসূল (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দু’রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি : ৮২)।
খাসির পায়া : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসূল (সা.) কুরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’
জলপাই : রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখ। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (তিরমিজি : ১৮৫১)।
এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়, রাসূল (সা.) মরুভূমির এক ধরনের পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ও সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি পছন্দ করতেন।
0 Comments