আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

প্রিয় দর্শক ,,

নমরুদ ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে পৃথিবীর বাদশাহ ছিল। সে ছিল পৃথিবীর চারজন বড় বড় শাসকের অন্যতম। নমরুদ প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করেছে। পবিত্র কোরআনে তার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

পৃথিবীতে সে-ই সর্বপ্রথম রাজমুকুট পরিধান করেছে এবং নিজেকে খোদা দাবি করেছে।

ইতিহাসবিদ ইবনে আসিরের বর্ণনা মতে, নমরুদের বংশপরম্পরা  এমন : নমরুদ বিন কিনআন বিন কুশ বিন হাম বিন নূহ (আ.)।


রাজাদের রাজা নমরুদ

নূহ (আ.)-এর মৃত্যুর পরের বছর মিসরে ৪২টি রাজ্যের রাজ্যপতিদের একটি সম্মেলন হয়, যেখানে নমরুদ রাজার রাজা (কিং অব কিংস) উপাধিতে ভূষিত হয়। এই খ্যাতি ও সম্মানের শিখরে পৌঁছে তার মানসিকতার পরিবর্তন আসে এবং নিজেকে দেবতা বলে দাবি করে এবং তার প্রার্থনা করার আদেশ দেয়, আর তখন থেকেই প্রজারা তাকে উপাস্যরূপে তার পূজা ও অর্চনা শুরু করে।


হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ


হজরত ইবরাহিম (আ.) ১০ বছর সবার আড়ালে এক গুহায় বসবাস করতেন। হয়তো নির্জনে বসবাস করার জন্য বাল্যকাল থেকেই হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রকৃতি এবং স্রষ্টাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। অবশেষে তিনি আসল স্রষ্টাকে চিনতে পারেন। আর তাই তাঁর গোত্রের লোকদেরকে দেব-দেবীর অসারত্ব দেখিয়ে দিতে সেসব মূর্তি ভেঙে দেন এবং বলেন যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, তারা তোমাদের কিভাবে রক্ষা করবে।


এর ফলে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে বন্দি করা হয় এবং নমরুদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হে ইবরাহিম, তোমার রব কে?’


তিনি জবাব দিলেন, ‘যিনি এক, যাঁর কোনো শরিক নেই, যিনি আরশের অধিপতি। ’


নমরুদ রেগে গিয়ে তার লোকদের বলল, ‘ওকে পুড়িয়ে ফেলো; সাহায্য করো তোমার দেবতাদের, যদি একান্তই তাদের জন্য কিছু করতে চাও। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৬৮)


নমরুদ বলল, ‘একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরি করো; আর হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দাও। আর পাহারা দাও যেন তাঁর কোনো সাহায্যকারী তাঁকে সাহায্য করতে না আসে। ’


লোকেরা এক জায়গায় লাকড়ি জোগাড় করে সেগুলোতে তেল ও ঘি ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করল। সাত দিন পর পূর্ণ অগ্নিকুণ্ড তৈরি হলো, কিন্তু সমস্যা হলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য কেউ আগুনের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারছিল না। এ সময় ইবলিস পর্যটকের বেশে সেখানে পৌঁছে চড়কগাছ তৈরির পরামর্শ দিল। তার পরামর্শে একটা চড়কগাছ তৈরি করা হয়। এবং তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।


মহান আল্লাহ আগুনকে নির্দেশ দেন—‘হে অগ্নি, তুমি হজরত ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৬৯)


হজরত ইবরাহিম (আ.) ৪০ দিন পর্যন্ত অগ্নিকুণ্ডে ছিলেন। আল্লাহর হুকুমে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় অগ্নিকুণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছেন।



নমরুদের ভয়ংকর মৃত্যু

নমরুদ আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিল। হজরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল, যখন সেটা কাছে চলে এলো, লাখ লাখ মশার গুনগুন শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তা-ও আবার নিরস্ত্র। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল। অতঃপর তাদের বুঝে ওঠার আগেই মশাগুলো তাদের নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন করা শুরু করল। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তীরন্দাজরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে অন্ধের মতো তরবারি চালাল, যার ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই আহত বা নিহত করে ফেলল।


মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে চলে এলো। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করল এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাসিকাপথে মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল। এরপর মগজে দংশন করা শুরু করল। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করল এবং যন্ত্রণায় দিশাহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করল। অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করল নমরুদ।


সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথার আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা. ৬৮৬)