আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় ভালো আছেন,
ফেরেশতারা ৭ ব্যক্তির জন্য সব সময় দোয়া করতে থাকে। যারা নিয়মিত বিশেষ কিছু আমল করে থাকেন। যে আমলগুলোর কথা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। কী সেই আমলগুলো? আর এই ৭ ব্যক্তিই বা কারা?
হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যারা অজু অবস্থায় ঘুমায়, নামাজের জন্য মসজিদে অপেক্ষায় থাকে, মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করে, নবিজীর প্রতি দরূদ পড়ে, রোগীকে দেখতে যায়, মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার পেছনে দোয়া করে, কল্যাণের কাজে দান করে; তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে। এই সাত ব্যক্তির সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনাগুলো তুলে ধরা হলো-
১. ওযূ অবস্থায় ঘুমানো ব্যক্তি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় (ওজূ অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথেই আল্লাহতালার সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে, হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।"
(আল ইহসান ফি তাকরির সহীহ ইবনে হিব্বান ৩/৩২৮-৩২৯)
২. সালাতের জন্য মসজিদে অপেক্ষারত ব্যক্তি
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যখন ওযূ অবস্থায় সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে সে যেন সালাতেই রত। তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো, হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি দয়া করো।"
(সহীহ মুসলিম ৬১৯)
৩. প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারী
বারা' (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, "প্রথম কাতারের নামাযীদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহতালা ক্ষমা করেন ও ফেরেশতারা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।"
(সহীহ ইবনে হিব্বান)
৪. রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দুরূদ পাঠকারী
"যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহতালা তার ওপর সত্তর বার দয়া করেন ও তার ফেরেশতারা তার জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। অতএব বান্দারা অল্প দুরূদ পাঠ করুক বা অধিক দুরূদ পাঠ করুক (এটা তার ব্যাপার)।"
(সহীহ ইবনে হিব্বান)
৫. রোগী পরিদর্শনকারী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, আল্লাহতালা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন, তারা দিনের যে সময় সে দেখতে যায় সে সময় থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং সে রাতের যে সময় দেখতে যায় সে সময় থেকে রাতের শেষ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।"
(সহীহ ইবনে হিব্বান ২৯৫৮)
৬. মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়াকারী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখনই সে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখন সে নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমীন অর্থাৎ হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ। " (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তাই দান করুন।)
(সহীহ মুসলিম ৮৮)
৭. কল্যাণের পথে দানকারী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "প্রতিদিন সকালে দু'জন ফেরেশতা অবতরণ করেন, একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দাও। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! যে দান করে না তার সম্পদকে বিনাশ করে দাও।"
(বুখারী ১৪৪২)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত সাত শ্রেণির মধ্যে নিজেদের নিয়োজিত রাখা। হাদিসের উপর যথাযথভাবে আমল করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে জীবন সাজানোই হবে উম্মতে মুহাম্মাদির কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত ৭ শ্রেণির ব্যক্তির অন্তর্ভূক্ত হতে এবং এ আমলে নিজেদের তৈরি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments